প্রভাতী ডেস্ক : বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নেই। সোমবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।ব্লাড ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পীকে।
জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে-এমন অনেক জনপ্রিয় গান নিয়ে ৮০ এর দশক থেকে শুরু করে টানা এক যুগের বেশি সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গানের জগতে ছিল তার রাজত্ব। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৯ মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে এসে ছিলেন রাজশাহীতে বোনের বাড়িতে।
সেখানে আজ সোমবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও এন্ড্রু কিশোরের বড় বোনের স্বামী ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস। মৃত্যুকালে এন্ড্রু কিশোরের বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। তিনি দুই সন্তান রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এন্ড্রু কিশোর তার গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
বিদেশে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর এই প্লেব্যাক সম্রাট রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় থাকা তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় ছিলেন। তার ওই বাড়িটির একটি অংশেই রয়েছে ক্লিনিক। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল এন্ড্রু কিশোরের। তবে গতকাল রবিবার (৫ জুলাই) থেকে এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তাই তার সুস্থতায় প্রাণ খুলে দোয়া করার জন্য সবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। এরপর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটায় দুপুরে বাড়িতে রেখেই তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়। এর পর সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ক্যান্সার আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোরকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলম বাবু জানান, দেশে ফিরলেও এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। রবিবার সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। কারো সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থাতেই ছিলেন না তিনি। বিকেলে এন্ড্রু কিশোরের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছিল।
তিনি জানান, প্রায় ৯ মাস পর সিঙ্গাপুর থেকে গত ১১ই জুন দেশে ফিরেন সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ২০শে জুন থেকে তিনি রাজশাহীতে ছিলেন তবে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। দেশে ফিরে কিছুটা সময় কোলাহলমুক্ত কাটাতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই ফেরার খবরটি এতদিন কাউকে জানাননি।
এ প্রসঙ্গে এন্ড্রু কিশোর কিছুদিন আগে বলেছিলেন, “কয়েক দিন হলো দেশে এসেছি। কিছুটা সময় একান্তে থাকতে চেয়েছি। তাই পরিবারের বাইরে কাউকে জানাইনি। তাছাড়া শরীরের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। ডাক্তার কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কোলাহলমুক্ত থাকতে হবে-সেই নির্দেশনা মেনেই চলছি।”
চেকআপের জন্য তিন মাস পর পর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শরীরের নানা জটিলতা নিয়ে সিঙ্গাপুর চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তিনি। ছয়টি ধাপে তাকে মোট ২৪টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, কয়েক মাস পর পর নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে তাকে। এর আগে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেশে ফেরা হয়নি তার। অবশেষে গত ১১ই জুন বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফেরেন তিনি।
১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমার মধ্য দিয়ে প্লেব্যাকে যাত্রা শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা সহায়তা করেছিলেন।
পাশাপাশি ‘গো ফান্ড মি’ নামে এক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সহশিল্পীদের মধ্যেও অনেকে তার পাশে দাঁড়ান কিন্তু তারপরেও তিনি আর ফিরে আসেননি।