প্রভাতী ডেস্ক : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার সানজিদ রশীদ চৌধুরী বলেছেন জাতীয় পার্টির ৯ বছরের শাসনামল ছিলো বাংলার মানুষের জন্য সোনালী ইতিহাস। আর পল্লীবন্ধু এরশাদ ছিলেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন- অগ্রগতির মহানায়ক। সে সময় দেশ ছিলো অর্থনীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ছিলোনা বেকারত্ব, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, হত্যা ও গুম। দেশ এখন অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছে। এই কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের একার নয়। পল্লীবন্ধু এরশাদও এর ভাগীদার। কারণ জাতীয় পার্টির কারণে এখনো ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ১লা জানুয়ারী চট্টগ্রামের সুপ্রভাত হলে বর্ণাঢ্য র্যালি পরবর্তী জাতীয় পার্টির ৩৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতুতেও পল্লীবন্ধু এরশাদের অবদান রয়েছে। উনার শাসনামল থেকে এই সেতুর পরিকল্পনা এবং তহবিল সংগ্রহ শুরু হয়। খালেদা জিয়া সরকারে থাকাকালীন সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন আয়োজন সম্পন্ন করেন। পরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে উদ্ভোধন করেন। যাই হোক পদ্মা সেতু হয়েছে এতে আমরা গর্বিত। কিন্তু যখন চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, জবর দখলে ভিন্নমতের স্বাধীনতা হরণ দেখি তখন মর্মাহত হতে হয় আমাদের। কারণ ভালো ও সুন্দর কাজের প্রত্যাশায় আপনাদের সমর্থন দিয়েছিলাম আমরা। তিনি বলেন দুর্বলের সাথে কেউ হাত মেলায়না তাই ভেদাভেদ ভুলে তৃণমূলে সংগঠন শক্তিশালী করতে তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জাপা কর্মীরা নিস্ক্রিয় এবং এরশাদের অবদান জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারে না বলে ভোট ব্যাংক বাড়তেছে না। নিজেদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ পরিহার না করায় এই পার্টি নিয়ে অনেকে হাসি ঠাট্টা করে। এই পার্টির প্রতি আমার অনেক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কারণ পার্টি করতে গিয়ে আমার মা প্রফেসর মাসুদা রশিদ চৌধুরীর গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে জাপার সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মহিলা পার্টির চেয়ারম্যান। পার্টির জন্য আমার বাবা সাবেক এমপি এবিএম ফজলে রশিদ চৌধুরী আজীবন কাজ করে গেছেন। কিন্তু নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ না হলে অভিমানে এই পার্টি ছাড়তে বাধ্য হব। কারণ আমাকে সংসদে যেতেই হবে যেহেতু আমার সেই যোগ্যতা রয়েছে।
চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবকিছু নিয়ে কেন্দ্র অবগত আছে। জিএম কাদের সাহেব সবচেয়ে শিক্ষিত এবং যোগ্য লোক। তিনি যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। এই সংকট নিরসনে আনিস এবং বাবলু সাহেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আসল কথা হলো পার্টিতে সবাইকে খুশি করা যায় না।কিন্তু তপন সাহেবকে বহিষ্কার করায় আমরা কেউ সন্তুষ্ট নয়। আমরা যখন তপন সাহেবের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য কাজ করতেছিলাম তখন সোলায়মান শেঠ সাহেব হাইকমান্ডকে ভুল বুঝিয়ে দিল। সোলায়মান শেঠ হাইকমান্ডকে বলেছিল তপন সাহেবকে জাপা ছাড় করাতে এবং নিঃশেষ করতে ৫ কোটি টাকার বাজেট করেছেন তখন আমি প্রতিবাদ করেছি। তপন সাহেব একজন দানবীর ও যোগ্য লোক, উনার মত লোক এতদিনে কেন্দ্রে আমার চাইতে ভালো অবস্থানে থাকার কথা। আমি কাউকে মাইনাসের পক্ষে নই, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় পার্টিকে আরো শক্তিশালী করতে চাই। কোন্দল নিয়ে দুঃখ করে বলেন, আওয়ামীলীগ বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনীতি না করে আমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ করে কেন শক্তি নষ্ট করবো? তপন গংদের বিরুদ্ধে সোলায়মান শেঠের দায়েরকৃত মামলা প্রসঙ্গে আমার মা তদন্ত কর্মকর্তার সাথে আলাপ করেছেন। এছাড়া তপন সাহেবকে কেন্দ্রে অনেক ভালো পদ প্রদানের মাধ্যমে তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করার আশ্বাস দেন।

জাতীয় পার্টির ৩৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন তপন চক্রবর্ত্তী
নগর জাপার সাবেক সহ-সভাপতি আনিসুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও নগর স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম রেজার পরিচালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী তপন চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা। আমি যখন রাজনীতি করি তখন শেঠের জন্মও হয়নি। সোলায়মান শেঠ আমাকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে মহানগর জাতীয় পার্টিকে পারিবারিক সম্পদে পরিণত করেছে। শেঠের কথায় উঠা-বসা করলে তাকে পুরস্কার অন্যথায় বহিষ্কার। মহানগর জাপার সভাপতি শেঠ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিল, সেই মামলার সাক্ষী হলো সাধারণ সম্পাদক। শেঠ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে প্রতিহিংসায় রূপান্তর করেছে উল্লেখে বলেন, তার সব ইতিহাস আমার জানা আছে। আমি এসব মামলা-হামলাকে ভয় পাই না। প্রয়োজনে সবাই একসাথে জেলে যাব তবুও এই সোলায়মান শেঠকে ছাড়বো না। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দিকে তাকিয়ে আছেন উল্লেখ করে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যদি এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা না হয় তাহলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে চট্টগ্রামের মাটিতে পা রাখতে দেওয়া হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নগর জাপার সাবেক সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান পল্টু এবং জাপা কেন্দ্রীয় সদস্য নাছির উদ্দীন সিদ্দিকী।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নগর জাপা সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী শওকত আকবর, নগর যুব সংহতির আহ্বায়ক অধ্যাপক নুরুল বশর সুজন, সদস্য সচিব আবছার উদ্দীন রনি, নগর কৃষক পার্টির সহ-সভাপতি এনামুল হক বেলাল, শ্রমিক পার্টির সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দীন, নগর কৃষক পার্টির সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ হারুন, নগর তরুণ পার্টির আহ্বায়ক রেজাউল করিম রেজা, কোতোয়ালী থানা জাপার আহ্বায়ক আমিনুল হক আমিন, সদস্য সচিব সেলিম উদ্দীন সেলিম, নগর মহিলা পার্টির আহ্বায়ক রাবেয়া বসরী বকুল, সদস্য সচিব শেলী আকতার, পল্লীবন্ধু পরিষদের আহ্বায়ক রিয়াজ উদ্দীন রিয়াজ, নগর যুব সংহতির যুগ্ম আহ্বায়ক কায়সার হামিদ মুন্না, এম.এ. শুক্কুর, বায়েজিদ থানা জাপা সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সেলিম, জাপা নেতা আতিকুল হক কাশেম, শামশুল আলম বি.কম, কাজী হেলাল হোসেন, কামাল উদ্দীন হীরা, নারী নেত্রী নাছরিন আকতার লাভলী, নুরুন্নাহার বেগম, বিলকিস সুলতানা, ছাত্রনেতা সুমন বড়ুয়া, আবু হাসান, শরিফুল মোল্লা নীরব, বাপ্পি আহমেদ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযুদ্ধা বাবু শ্রী তপন চক্রবর্ত্তীকে বহিষ্কার করার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠকে বহিষ্কার করে নতুন কমিটি ঘোষণার জোর দাবী জানান।
আলোচনা সভা শেষে নেতাকর্মীরা কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।